Search

বাইবেলীয় পরিভাষা

কিছু বাইবেলীয় পরিভাষার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

জল ও আত্মার সুসমাচারের সাথে সম্পর্কিত

  • 1. প্রায়শ্চিত্তঃ-

    বন্দীব্যক্তি, বন্ধকী সম্পত্তি বা ঋণ থেকে পুনঃমুক্তি লাভের মুক্তিপন, অর্থাৎ মূল্য (আর্থিক) দ্বারা সমস্যার সমাধান করা। অধিকাংশ স্থানে পুনরুদ্ধারের ইতিবাচক রূপক হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে, যাত্রা ২০:৩০ পদ – ‘সমস্ত মূল্য’, গণনা ৩৫:৩১-৩২ পদ (যিশা ৪৩:৩পদ ‘প্রায়শ্চিত্ত’) নূতন নিয়মে প্রায়শ্চিত্ত কথাটি ‘মূল্যরূপে’ বর্ণিত হয়েছে- (মথি ২০:২৮পদ এবং মার্ক ১০:৪৫পদ)।

  • 2. প্রতিকার করা/ প্রতিবিধানঃ-

    মানবজাতির সমস্ত পাপের দায় যীশুর উপর বর্ত্তনো হয়েছে। পুরাতন নিয়মে পশুর মস্তকে হস্তার্পনের মাধ্যমে পাপভার সেই বলির উপর বর্ত্তানো হতো। একই উদ্দেশ্যে যোহন বাপ্তাইজক যীশুর বাপ্তিস্মের সময় হস্তার্পণ করলেন। হিব্রু ও গ্রীক ভাষায় এর অর্থ দাঁড়ায় যে সমগ্র পাপী মানুষের পাপভার যীশুর উপর ন্যস্ত করা হলো যেন পিতা ঈশ্বরের সাথে মানুষের আবার পুণর্মিলন হয়। প্রায়শ্চিত্তের বলিরূপে যীশুর বাপ্তিস্ম ও ক্রুশীয় মৃত্যু নতুন নিয়মে যথার্থভাবে বর্ণিত হয়েছে। 
    পুরাতন নিয়মে প্রতিবিধান (Atonement) শব্দটি প্রায় ১০০বার উল্লেখ করা হয়েছে।
    পুরাতন নিয়মে সর্বস্থানে গ্রীকভাষায় ‘kaphar’ (অর্থাৎ ‘প্রতিবিধান করা’ হিসাবে দেখান হয়েছে), (লেবীয় ২৩:২৭ পদ, ২৫:৯ পদ, গণনা ৫:৮ পদ)। হিব্রু ভাষায় ‘প্রতিবিধান’ বলতে বুঝানো হয়েছে – একটি ছাগের মস্তকে হস্তার্পণের মাধ্যমে অপরাধ স্বীকার করা এবং ইস্রায়েল সন্তানদের সমস্ত পাপ ঐ ছাগের উপর বর্ত্তানো হতো (লেবীয় ১৬:২০পদ)।
    নতুন নিয়মে অরামীয় ‘kpr’ শব্দের সাথে প্রতিবিধান শব্দটি সম্পর্কিত –যার অর্থ ‘আচ্ছাদন করা’। এই শব্দটি দ্বারা যীশুর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে পাপমুক্তিকে বুঝানো হয়েছে।

  • 3. বাইবেলে প্রতিবিধানঃ-

    ক)পুরাতন নিয়মে সাধারণতঃ পশুবলিদানের মাধ্যমে প্রতিকার/প্রতিবিধান হতো (যাত্রা ৩০:১০, (লেবীয় ১:৪, ৪:২০-২১পদ)।
    খ) পুরাতন নিয়মের মত নূতন নিয়মেও বলিদানের মাধ্যমে প্রতিবিধানের প্রথা অনুসরন করা হয়েছে। অর্থাৎ যীশুর মাধ্যমে মানুষ পাপ থেকে উদ্ধার পায়। প্রেরিত পৌল বলেছেন যে যীশু আমাদের পাপের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন (১ করি ১৫:৩ পদ)। প্রতিবিধান বলতে যীশুর মৃত্যুর দ্বারা শুধু আসল পাপ মুক্তির কথা বলা হয়নি; কিন্তু সকল মানুষের সকল পাপের কথা বলা হয়েছে।
    বাপ্তিস্মের মাধ্যমে যীশু সব মানুষের পাপভার নিজের কাঁধে তুলে নিলেন এবং ক্রুশে রক্তপাতের মাধ্যমে সমগ্র মানব জাতিকে উদ্ধার করলেন (লেবীয়১:১৫ ও যোহন ১৯:৩০ পদ)।
    ২করিঃ৫:১৪ পদে প্রেরিত পৌল বলেন, “একজন সকলের জন্য মরিলেন।” ২১ পদে বলেন “আমাদের জন্য”; “আমাদের সকলের পক্ষে শাপস্বরূপ হইলেন” – গালাঃ৩:১৩পদ। নতুন নিয়মের অনেক স্থানে যীশুকে বলিরূপে দেখানো হয়েছে (ইফিঃ৫:২পদ), (যোহন ১:২৯,৩৬পদ) মেষশাবক – যোহন বাপ্তাইজক) এবং ১করি ৫:৭ পদ (“আমাদের নিস্তারপর্ব”-প্রেরিত পৌল)।
    যা হোক, যর্দন নদীতে যীশুর বাপ্তিস্মকে- জগতের সমস্ত পাপের প্রতিবিধান হিসাবে দেখিয়েছেন। রোমীয় ৬ অধ্যায়ে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন- যোহন বাপ্তাইজকের মাধ্যমে বাপ্তিস্ম গ্রহনের দ্বারা জগতের সমস্ত পাপ তাঁর উপরে বর্তিয়েছে। তিনি আরো বলেছেন যে, যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যু পাপের জন্য ন্যায়বিচার ও মুক্তিপণ; এবং প্রায়শ্চিত্ত রূপে তিনি সমগ্র মানুষের আত্মার পক্ষে নিজেকে সমর্পণ করলেন।
    পুরাতন নিয়মের প্রায়শ্চিত্তের বলিদান বিষয়টি যীশুর মৃত্যুতেই পরিপূর্ণতা পেয়েছে। পুরাতন নিয়মের হস্তার্পণ প্রথা নূতন নিয়মে যীশুর বাপ্তিস্মের প্রতিরূপ এবং তা ঈশ্বরের ব্যবস্থানুরূপে (যিশাইয় ৫৩:১০ পদ, মথি ৩:১৩-১৭ পদ, ইব্রিয় ৭:১-১০,১৮ পদ, ১পিতর ৩:২১ পদ)।
    শুধু যীশুর বাপ্তিস্ম ও মৃত্যু ঘোষণা করেই নূতন নিয়ম শেষ হয়ে যায়নি বরং যীশুতে বাপ্তাইজিত হয়ে এবং তাঁর মৃত্যুর মাধ্যমে পরিত্রাণকার্য সম্পূর্ণরূপে সাধিত হয়েছে (রোমীয় ৬:৩৭ পদ, গালাতীয় ২:১৯,২০ পদ)।
    যোহন বাপ্তাইজকের দ্বারা যীশু খ্রীষ্টের বাপ্তিস্ম নেওয়ার অর্থ হলো তিনি সমগ্র জগতের পাপভার কাঁধে তুলে নিলেন এবং তারই ফলশ্রুতিতে ক্রুশে মৃত্যুবরণ করলেন। বাপ্তিস্ম ও রক্ত দ্বারা যীশু খ্রীষ্ট যে শুধু জগতের পাপ ধুয়ে নিলেন এবং ব্যাথা বহন করলেন তাই নয়, কিন্তু শয়তানের কবল থেকে আমাদের মুক্ত করলেন। মানুষের প্রাপ্য শাস্তি নিজে নিলেন এবং ঈশ্বরের শক্তি প্রাপ্ত হলেন। পাপের প্রতিবন্ধকতা মানুষের সাথে ঈশ্বরের যে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ছিল, যীশু সেই সমস্যার সমাধান করলেন, মানুষকে পাপ থেকে উদ্ধার করলেন। এই বিশেষ ঘটনার ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যে শান্তি ও যোগসূত্র; পরিত্রাণের আনন্দ (রোমীয় ৫:১১), জীবন (রোমীয় ৫:১৭,১৮) এবং উদ্ধার (মথি ৩:১৫, যোহন ১:২৯, ইব্রীয় ১০:১-২০, ইফিষীয় ১:৭, কলসীয় ১:১৪ পদ) আনয়ন করলেন।

  • 4. প্রায়শ্চিত্ত দিনঃ

    হিব্রু ভাষায় “প্রায়শ্চিত্ত” কথাটিকে “আচ্ছাদন” অথবা “সমন্বয়” হিসাবে বুঝানো হয়েছে। প্রায়শ্চিত্ত দিন; সপ্তম মাসের দশম দিন (লেবিয় ২৩:২৭, ২৫:৯ পদ) যিহুদীদের জন্য সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ দিন ছিল। লেবীয় ১৬ অধ্যায়ের বর্ণনা অনুযায়ী দেখা যায় যে, যথার্থ ধর্মীয় আচারানুষ্ঠান ছাড়া মহাযাজকও সেই মহাপবিত্র স্থানে প্রবেশ করতে পারতেন না। 
    ইস্রায়েলীয়দের মত মহাপবিত্র স্থানের জন্যও প্রায়শ্চিত্তের প্রয়োজন ছিল। সেই কারণে মহাযাজক বলিদানের জন্য আনা পশুর মস্তকে হস্তার্পণ করতেন যেন সমস্ত পাপ সেই বলির উপরে ন্যস্ত হয়। প্রায়শ্চিত্ত দিনে ইস্রায়েল জাতি ঈশ্বরের পবিত্রতা এবং তাদের পাপ সম্বন্ধে চিন্তা করত।
    এই সময় তারা এক সাথে পনেরটি বলি দিত। ১২টি হোমবলি এবং ৩টি পাপার্থক বলি প্রায়শ্চিত্তের জন্য ঈশ্বরের সম্মুখে উপস্থিত করত (লেবীয় ১৬:৫-২৯ পদ, গণনাপুস্তক ২৯:৭-১১ পদ)। যদি আমরা গণনাপুস্তক ২৮ অধ্যায় ৮ পদের মেষশাবককে যোগকরি তাহলে মোট ১৩টি হোমবলি এবং ৪টি পাপার্থক বলির জন্য নির্ধারিত ছিল।
    বার্ষিক পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য ইস্রায়েলরা সপ্তম মাসের দশম দিন পালন করত। যে দিন যীশু যোহন বাপ্তাইজকের কাছে বাপ্তিস্ম নিলেন, সেই দিনটিও একই নিদর্শন বহন করে। এটা ছিল প্রায়শ্চিত্তের দিন (মথি ৩:১৩-১৭ পদ)। এই দিন ঈশ্বর সমস্ত জগতের পাপভার ধুয়ে দিলেন (মথি ৩:১৫ পদ)। এই দিনেই ঈশ্বর “এইরূপে সমস্ত ধার্মিকতা সাধন করলেন”।

  • 5. প্রায়শ্চিত্তের বলিদানঃ

    পুরাতন নিয়মঃ অন্যান্য বলিদানের মত সমাগম তাম্বুতে শুচিকরণের বলিদান করা হত। মহাযাজক নিজেকে এবং নিজের গৃহকে পরিস্কার করতেন এবং পরিস্কার মসিনা বস্ত্র পরিধান করতেন। এই উদ্দেশ্যে পাপার্থক বলিরূপে একটি গো বৎস এবং হোমবলিরূপে একটি মেষ উৎস্বর্গ করতেন (লেবীয় ১৬:৩,৪ পদ)। মহাযাজক বলিকৃত পশুর মস্তকে হস্তার্পণ করতেন–যার মাধ্যমে সমস্তপাপ ঐ বলির উপরে ন্যস্ত করা হত। 
    প্রায়শ্চিত্ত দিনের একটি বিশেষ দিক এই হস্তার্পণ যদি এই ভাবে না করা হত, তাহলে বলিদান প্রথা যথাযথভাবে অনুসরন করা হত না। এই ভাবে ইস্রায়েলিয়রা বিগত বছরের পাপ থেকে মুক্তি পেত।
    লেবীয় ১৬:২১ পদে লেখা আছে “পরে হারোণ সেই জীবিত ছাগের মস্তকে আপনার দুই হস্ত অর্পন করিবে এবং ইস্রায়েল”
    সন্তানগনের সমস্ত অপরাধ ও তাহাদের সমস্ত অধর্ম অর্থাৎ তাহাদের সর্ববিধ পাপ তাহার উপরে স্বীকার করিয়া সে সমস্ত পাপ ঐ ছাগের মস্তকে অর্পন করিবে; পরে তাহাকে প্রান্তরে পাঠাইয়া দিবো।” 
    তিনি পাপার্থক বলিরূপে দুই ছাগ এবং হোমবলিরূপে একটি মেষ (৫ পদ) লোকদের কাছ থেকে নিতেন। তারপর সমাগম তাম্বুর দ্বারে ছাগ দু’টিকে প্রভুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করতেন। এবং একটি প্রভুর উদ্দেশ্যে খন্ড করতেন, এবং অন্যটি জীবিত রাখতেন। 
    একটিকে পাপার্থক বলিরূপে খন্ড খন্ড করে উৎসর্গ করা হত। অন্যটির উপরে জীবিত অবস্থায় হস্তার্পণের মাধ্যমে ইস্রায়েল জাতির এক বছরের সমস্ত পাপ ন্যাস্ত করা হত এবং প্রান্তরে ছেড়ে দেওয়া হত (লেবীয় ১৬:৭-১০ পদ)।
    জীবিত ছাগটির উপরে হস্তার্পণের মাধ্যমে ইস্রায়েলদের পাপ ন্যস্ত করা হত। এবং তারপর ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যে শান্তিস্থাপনের জন্য প্রান্তরে ছেড়ে দেওয়া হত। এই ভাবে ইস্রায়েল জাতির এক বছরের পাপমোচন করা হত। 
    নূতন নিয়মঃ একই ভাবে নুতন নিয়মে যোহন বাপ্তাইজকের দ্বারা যীশু বাপ্তিস্ম নিলেন (হস্তার্পণের মাধ্যমে) এবং বলিদানকৃত মেষশাবক হিসাবে ঈশ্বরের পরিত্রাণ সাধনের জন্য জগতের পাপভার তুলে নিলেন (লেবীয় ২০:২২, মথি ৩:১৫ যোহন ১:২৯,৩৬)। 
    পুরাতন নিয়মে পাপার্থকবলি উৎসর্গ করার পূর্বে, হারোণ তার নিজের এবং তার গৃহের জন্য একটি গোবৎস বলি দিতেন (লেবীয় ১৬:১১ পদ)। তারপর বেদীর উপর থেকে প্রজ্জ্বলিত অঙ্গারধানী ও এক মুষ্টি চূর্ণিকৃত ধুপ নিয়ে তীরস্করণীর ভিতরে যেতেন। তারপর তিনি প্রভুর সম্মূখে সেই সুগন্ধি অগ্নিতে নিক্ষেপ করতেন, যেন তার ধুপের ধুম পবিত্র স্থানকে আচ্ছাদন করে। তিনি সেই গোবৎসের কিছু রক্ত নিয়ে সেই পবিত্র স্থানের বিভিন্ন দিকে সাত বার ছিটাতেন (লেবীয়১৬:১২-১৯পদ) প্রায়শ্চিত্তের দিনে হারোণ বলির উপর হস্তার্পণে বিরত থাকতেন না। 
    হস্তার্পণের মাধ্যমে হারোণ সমস্ত ইস্রায়েলের পাপ সেই বলির মস্তকে ন্যস্ত করতেন। তখন এক জন উপযুক্ত লোক ছাগটিকে নিয়ে প্রান্তরে ছেড়ে দিয়ে আসত। ইস্রায়েলের পাপের বোঝা নিয়ে ছাগটি প্রান্তরে ঘোরাফেরা করত। এবং একসময়ে মারা যেত। এটাই ছিল পুরাতন নিয়মের প্রায়শ্চিত্তের বলিদানের প্রথা। নূতন নিয়মে যীশুর মাধ্যমে (প্রান্তরে ছেড়ে দেওয়ার ছাগটির মত) সাধিত হয়েছে।

  • 6. হস্তার্পন অর্থাৎ অভিষেকঃ

    পুরাতন নিয়মে এই প্রক্রিয়াকে পাপার্থক বলির উপর পাপভার অর্পন করা বুঝানো হতো (লেবীয় ৪:২৯ পদ, ১৬:২১ পদ)। পুরাতন নিয়মের সময়ে সমাগম অম্বুর মধ্যে বলির উপর হস্তার্পণের মাধ্যমে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার নিয়মটি ঈশ্বর অনুমোদন করেছিলেন। আর এটাই নতুন নিয়মে যীশুর বাপ্তিস্মের প্রতিরূপ।

  • 7. বাপ্তিম্ম:

    বাপ্তিস্ম অর্থ ( ১ ) ধৌত হওয়া,( ২ ) আত্মিকভাবে সমাধিত / সমাহিত হওয়া, ( ৩ ) পুরাতন নিয়মের বিধির অনুরূপে হস্তার্পন দ্বারা পাপ দূর করা। 
    যোহন বাপ্তাইজকের দ্বারা বাপ্তিস্ম নিয়ে নতুন নিয়মে প্রভু যীশু জগতের পাপভার ধুয়ে দিলেন। “যীশুর বাপ্তিস্ম” অর্থ মানুষের পাপ তুলে নেওয়া, জগতের পাপভার ধুয়ে দেওয়া। 
    হারোণের বংশের প্রতিনিধি যোহন বাপ্তাইজক (মহাযাজক) দ্ধারা বাপ্তাইজিত হয়ে যীশু সমগ্র জগতের পাপভার আপন কাঁধে তুলে নিলেন। এটাই ছিল তাঁর বাপ্তিস্মের উদ্দেশ্য । 
    “যীশুর বাপ্তিস্ম” - এর আত্মিক অর্থ “ন্যস্ত করা, সমাধিস্থ হওয়া”, অর্থাৎ আমাদের স্থানে বিচারিত হওয়াতে আমাদের সকলের সমস্ত পাপ তাঁর উপর বর্তালো। মানবজাতিকে উদ্ধারের জন্যই তিনি মৃত্যুর মাধ্যমে আমাদের পাপ তুলে নিলেন। 
    এইভাবে তাঁর মৃত্যু - আপনার আমার অর্থাৎ জগতের সকল পাপীর মৃত্যু এবং তাঁর পুনরুত্থান মানে সকলের পুনরুত্থান। তাঁর এই প্রায়শ্চিত্তের অর্থ সকল পাপী মানুষের পরিত্রাণ, তাঁর বাপ্তিস্ম অর্থ জগতের সকলের সমস্ত ধৌত করার সাক্ষ্য। 
    বাইবেল আমাদের বলে, “এখন উহার প্রতিরূপ বাপ্তিস্ম- তোমাদিগকে পরিত্রাণ করে” (১পিতর ৩:২১ পদ)। যীশুর বাপ্তিস্ম মানে সকল পাপ থেকে ধৌত হয়ে পাপী মানুষের ধার্মিকগণিত হওয়া।
    হারোণের বংশের প্রতিনিধি যোহন বাপ্তাইজক (মহাযাজক) দ্ধারা বাপ্তাইজিত হয়ে যীশু সমগ্র জগতের পাপভার আপন কাঁধে তুলে নিলেন। এটাই ছিল তাঁর বাপ্তিস্মের উদ্দেশ্য । 

  • 8. পাপ:

    ঈশ্বরের বিপক্ষ যা তাই পাপ অর্থাৎ আদি পাপ থেকে বর্তমান সময়ে আমাদের সমস্ত পাপকেই বুঝায়।
    গ্রীক ভাষায় ‘পাপ’ এর প্রতিশব্দ ‘αμαρτία (hamartia)’ এবং “পাপ করা” “Hamartano” অর্থাৎ “লক্ষ্যচ্যুত হওয়া” ,অন্য কথায়-যীশুতে বিশ্বাস করা কিন্তু পাপ থেকে উদ্ধার পাওয়ার সামর্থের অভাব। পাপ করার অর্থ ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়া বা ঈশ্বরেকে অবজ্ঞা করা-এই জ্ঞানের অভাব। যদি সত্যিই আমরা ঈশ্বরের সাক্ষাতে পাপ করতে না চাই, তাহলে অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস আনতে হবে এবং যীশুই যে একমাত্র ত্রাণকর্তা-তা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে। ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে আমাদের অবশ্যই যীশুর বাপ্তিস্ম ও ক্রুশে বিশ্বাস করতে হবে।ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস না করা, সত্য এড়িয়ে যাওয়া এবং ভ্রান্ত মতবাদ বিশ্বাস করা পাপ। বাইবেল বলে, “ঈশ্বর আমাদের সকল পাপ ধুয়ে নিয়েছেন”-এই সত্যে অবিশ্বাস করা মারাত্মক পাপ।যীশুর জন্ম, বাপ্তিস্মের মাধ্যমে পাপ ধুয়ে নেওয়া, ক্রুশীয় মৃত্যুর মাধ্যমে আমাদের জীবনদান- এই সকল সত্যে আমাদের বিশ্বাস করতে হবে।যীশু বাপ্তিস্ম নিয়েছেন, ক্রুশে প্রাণ দিয়েছেন এবং আমাদের উদ্ধার করার জন্য পুনরুথিত হয়েছেন; -এই সত্যে বিশ্বাস না করা পাপ।

  • 9. অনুতাপ/মন পরিবর্তন:

    ঈশ্বর থেকে দূরিভূত কোন লোক যখন পাপের চেতনা পায় এবং বিশ্বাস করে যে, যীশু তার সমস্ত পাপ তুলে নিয়েছেন এবং যখন আবার ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসে, তাকেই বলে অনুতাপ বা মন পরিবর্তন।
    সকল মানুষই পাপে পরিপূর্ণ। সত্যিকার অনুতাপ বলতে এটা স্বীকার করা বুঝায় যে, ঈশ্বরের স্বাক্ষাতে আমরা সকলেই পাপী। সারা জীবন আমরা পাপ করি এবং মৃত্যুর পর নরকই আমাদের গন্তব্য। আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, আমাদের মত পাপীদের জন্য যীশু জগতে এসেছিলেন এবং(বাপ্তিস্মের মাধ্যমে) তিনি আমাদের সব পাপ তুলে নিয়েছেন, মৃত্যুবরণ করেছেন এবং আমাদের উদ্বার করার জন্য আবার পুনুরুত্থিত হয়েছেন। প্রকৃত অনুতাপ বলতে বুঝার-আমাদের নিজস্ব সমস্ত চিন্তা-চেতনা ত্যাগ করে ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসা(প্রেরিত ২:৩৮ পদ)।
    অনুতাপ হল পাপ স্বীকার করা, ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসা এবং হৃদয় দিয়ে জল ও রক্তের পরিত্রাণ গ্রহন করা (১যোহন৫:৬পদ)। 
    নিজেদেরকে পরিপূর্ণ কর্তা হিসাবে স্বীকার করা এবং ঈশ্বরের পুত্র যীশু খ্রীষ্টকে পরিত্রাণ কর্তা হিসাবে বিশ্বাস ও গ্রহন করাই হল প্রকৃত অনুতাপ।পাপ থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের নিজস্ব কর্মফলে বিশ্বাস করলে চলবে না, বরং ঈশ্বরের ও তাঁর নিয়ম অনুযায়ী নিজেদেরকে পরিপূর্ণ পাপী হিসাবে স্বীকার করতে হবে।জল ও আত্মার মাধ্যমে নুতন জন্ম লাভ করে আমাদের প্রকৃত সত্য গ্রহন করতে হবে।যীশু তার বাপ্তিস্ম ও রত্তুর মাধ্যমে আমাদের জন্য এই পরিত্রাণ সাধন করেছেন।
    একজন পাপীকে, নিজস্ব চিন্তা-চেতনা পরিত্যাগ করে অবশ্যই যীশুর কাছে সস্পুর্ণরূপে ফিরে আসতে হবে। যীশু তার বাপ্তিস্ম দ্ধারা আমাদের সমস্ত পাপ তাঁর কাঁধে তুলে নিয়েছেন –এই সত্য যখন আমরা স্বীকার করব তখনই পরিত্রাণ পাব। 
    অন্য কথায় , যীশুর বাপ্তিস্ম , ক্রুশীয় মৃত্যু এবং পুনুরুত্থানে বিশ্বাসই একজন পাপীকে পাপ থেকে উদ্ধার করতে পারে । আমাদের পাপ ধুয়ে দেওয়ার জন্য যীশু মাংসে মুর্তিমান হলেন, বাপ্তাইজিত হলেন এবং ক্রুশে বিদ্ধ হলেন। আমাদের ত্রাণকর্তা রূপে যিনি পুনুরুত্থিত হয়েছেন -এই প্রকৃত সত্যে বিশ্বাস করে প্রকৃত অনুতাপ ও বিশ্বাসের মাধ্যমে পরিত্রাণ লাভ করা যায় ।

  • 10. পরিত্রাণ:

    পরিত্রাণ অর্থ “ডুবন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার পাওয়া”। যখনই আমরা স্বীকার করব যে, আমরা পাপী, নরকই আমাদের একমাত্র গন্তব্য: যীশু তার জন্ম, বাপ্তিস্ম এবং ক্রুশীয় মৃত্যু দ্বারা রক্তের মাধ্যমে। আমাদের উদ্ধার করেছেন -এই বিশ্বাসের মাধ্যমে পরিত্রাণ পাব। 
    যীশুর বাপ্তিস্ম ও রক্তে বিশ্বাস করে যারা পাপ থেকে মুক্ত হয় তাদেরকে বলা হয় “পরিত্রাণ প্রাপ্ত, নুতন জন্ম প্রাপ্ত,ধার্মিক”।
    তাদেরকেই আমরা পরিত্রাণ প্রাপ্ত বলতে পারি যারা যীশুতে বিশ্বাস করার মাধ্যমে তাদের সমস্ত পাপ ( আদি পাপ ও প্রতিদিনকার ) থেকে উদ্ধার পেয়েছে। ঠিক যেমন একজন ডুবন্ত মানুষ উদ্ধার পায়, তেমনি ভাবে জগতের পাপে ডুবন্ত মানুষ যীশুকে ত্রাণকর্তা হিসাবে গ্রহন করে, তার বাপ্তিস্ম ও রক্তে বিশ্বাস করে, আত্মিক সত্যের বাক্যে বিশ্বাস করে পাপ থেকে মুক্তি পায়।

  • 11. নূতন জন্ম লাভ:

    “দ্বীতীয় জন্ম”। যীশুর বাপ্তিস্ম ও রক্তে বিশ্বাস করে একজন পাপী আত্মিকভাবে নুতন জন্ম লাভ করে।
    যীশুর বাপ্তিস্ম ও রক্তে বিশ্বাসের মাধ্যমে আমরা নুতন জন্ম লাভ করতে পারি। তারাই নতুন জন্ম প্রাপ্ত যারা “পাপ মুক্ত অবস্থায় প্রভুর আগমনের অপে‌ক্ষা করছে”।

  • 12. পাপের প্রায়শ্চিত্তঃ

    এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে পাপের ক্ষমা লাভও বলা হয়। জল ও রক্তের সুসমাচারে বিশ্বাসের মাধ্যমে আমরা একবারেই পাপের ক্ষমা প্রাপ্ত হই। জল ও রক্তের সুসমাচার বলতে বুঝায় – ঈশ্বরের পুত্র যীশু খ্রীষ্ট মানুষরূপে পৃথিবীতে এসেছিলেন, তিনি নিজে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন এবং আমাদের সকলের পরিত্রাণের জন্য ক্রুশে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
    যীশু তাঁর বাপ্তিস্ম ও রক্তের মাধ্যমে (যেমন পুরাতন নিয়মে লেখা আছে) জগতের সমস্ত পাপী মানুষকে নিজেই পাপ থেকে উদ্ধার করলেন। যীশুর বাপ্তিস্ম ও রক্তে বিশ্বাসের মাধ্যমে পাপ থেকে ধৌত হওয়া যায় – এই সত্যই বাইবেলে উল্লেখ করা হয়েছে। সমস্ত পাপই যীশুর উপরে বর্তানো হয়েছে, সুতরাং মানুষের হৃদয়ে আর পাপ থাকতে পারে না।
    বাপ্তিস্মের মাধ্যমে আমাদের পাপ যীশু তাঁর নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন – এই বিশ্বাসে আমরা পরিত্রাণ পাই এবং ধার্মিক গণিত হই।

  • 13. যীশু খ্রীষ্টঃ

    যীশুঃ “পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে পাপ ও পাপের শাস্তি থেকে উদ্ধারকর্তা,” যীশু মানে ত্রাণকর্তা, যিনি সকল মানুষকে পাপ থেকে উদ্ধার করেন।
    খ্রীষ্টঃ “অভিষিক্ত”। ঈশ্বর কর্তৃক তিনটি প্রধান ভূমিকায় অভিষিক্ত
    (১) রাজা
    (২) ভাববাদী
    (৩) যাজক
    যীশু খ্রীষ্ট এই তিন ভুমিকায় সকল কাজ সম্পন্ন করেছেন। যখন আমরা যীশুকে, যিনি আমাদের পরিত্রাণ সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছেন, রাজা, ভাববাদী ও যাজক হিসাবে স্বীকার করি তখনই আমরা বলতে পারি যীশু খ্রীষ্ট। তিনি স্বর্গীয় মহাযাজক হিসাবে তাঁর বাপ্তিস্ম ও রক্তের মাধ্যমে জগতের সমস্ত পাপ থেকে আমাদের উদ্ধার করেছেন।
    সুতরাং যারা তাঁকে বিশ্বাস করে তিনি তাদের সকলের রাজা। যখন আমরা তাঁর সাক্ষাতে উপস্থিত হই তখন তিনি আমাদের পাপের চেতনা দেন। তিনি আমাদের শিক্ষা দেন যে, পুরুষানুক্রমে আমরা পাপী, জন্মগতভাবে আমরা পাপী, এটাও শিক্ষা দেন যে, তাঁর বাপ্তিস্ম ও রক্তের মাধ্যমে আমরা পাপ থেকে ধৌত ও মুক্ত হই। আমাদের মত পাপীর জন্য তিনি এই সকল কাজ করেছেন।

  • 14. ঈশ্বরের ব্যবস্থা (দ্শ আজ্ঞা):

    ঈশ্বরের সাক্ষাতে আমদেরকে উপস্থাপন করার জন্য যতগুলো বিষয় আছে –দ্শ আজ্ঞা তাদের মধ্যে মূল বিষয়।প্রতিদিনকার জীবনযাপন প্রণালীর জন্য ৬১৩টি বিষয় আছে।“এটা কর” এবং “ওটা করো না”-এমন অনেক আদেশ-নিষেধ আছে। এগুলো আমাদের জীবনযাপনের নিয়মাবলী। ঈশ্বরীয় আজ্ঞা দও হয়েছে যেন আমরা পাপ সমন্ধে বুঝতে পারি। ঈশ্বরীয় লিখিত আজ্ঞার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের কতটি অবাধ্য হয়েছি তা বুঝতে পারি (রোমীয় ৩:১৯,২০ পদ)
    ঈশ্বর আমাদের এই জন্য আজ্ঞা দিয়েছেন যেন আমরা পাপ সম্বন্ধে বুঝতে পারি। আমরা কখনই তার সব আজ্ঞা পালন করতে পারি না; যতক্ষণ আমরা যীশুতে বিশ্বাস না করছি, ততক্ষণ পর্যন্ত নম্রতার সঙ্গে আমাদের স্বীকার করা উচিত যে আমরা পাপী। সুতরাং আজ্ঞা পালনের মাধ্যমে জীবনযাপন করতে গিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরনের পাপ আমাদের করা উচিত না। আমরা সকলেই পাপী এবাং ঈশ্বর এও জানেন যে আজ্ঞা পালন করতে পারব না, তাই রক্ষা পাব না। তাই তিনি মানুষরূপে জগতে এলেন, বাপ্তাইজিত হলেন এবং ক্রুশীয় মৃত্যু দ্ধারা বিচারিত হলেন।
    সুতরাং দেখতে পাচিছ ঈশ্বরের আজ্ঞা সকল সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ এবং মানুষ সত্যিকার অর্থে দূর্বল। কারণ, আজ্ঞাগুলোর মাধ্যমে ঈশ্বরের পবিত্রতা ও বিশুদ্ধতা প্রকাশ পায়।

  • 15. যীশু যে যর্দ্দন নদীতে বাপ্তাইজিত হয়েছিলেনঃ

    মৃত সাগর – যেখানে কোন জীবিত প্রাণি থাকতে পারে না –যর্দ্দন নদী সেদিকেই বয়ে যাচ্ছে। মৃত সাগরের উপরিভাগ সমুদ্র সমতল থেকে অনেক নিচে। সুতরাং মৃত সাগরের জল কোথাও যেতে পারে না, এক জায়গাতেই বদ্ধ থাকে। 
    যোহন বাপ্তাইজকের দ্বারা যীশু মৃত্যু নদীতে (যর্দ্দন নদী) বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন। এর দ্বারা বোঝা যায় যে, যাদের হৃদয়ে পাপ নাই তারা ছাড়া আর সব মানুষ অনন্তকালীয় নরক যন্ত্রনাভোগ করবেন। 
    সুতরাং যর্দ্দন নদী হলো পাপ ধৌত করার নদী, যেখানে পাপীরা মৃত্যুবরণ করবে। সংক্ষেপে, এটা সেই নদী যেখানে যীশু তার বাপ্তিস্মের মাধ্যমে সকল মানুষের পাপ ধুয়ে দিয়েছেন। এট পাপ থেকে উদ্ধার পাওয়ার নদী।
    যোহন বাপ্তাইজকের দ্বারা যীশু মৃত্যু নদীতে (যর্দ্দন নদী) বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন।

  • 16. স্থায়ী প্রায়শ্চিত্তের বলিদানঃ

    যীশুতে বিশ্বাসের মাধ্যমে সমস্ত জগতের পাপভার একবারে মুক্তির প্রায়শ্চিত্ত। যেহেতু যীশু ঈশ্বরের পুত্র এবং আমাদের অনন্তকালীয় তাই তিনি জগতের সব পাপ একবারে চিরকালের জন্য তুলে নিতে পারেন। কিভাবে তিনি চিরকালের জন্য আমাদের পাপ তুলে নিতে পারেন?
    (১) মানুষরূপে জন্মগ্রহন করে
    (২) যর্দ্দন নদীতে যোহন বাপ্তাইজকের দ্বারা অবগহিত হয়ে
    (৩) ক্রুশীয় বিচার দ্বারা বিচারিত হয়ে। 
    ঈশ্বরের পুত্র মানবরূপে পৃথিবীতে এসে যোহন বাপ্তাইজকের দ্বারা বাপ্তাইজিত হলেন এবং সমস্ত জগতের পাপভার তুলে নিলেন। তারপর তিনি চিরকালের জন্য মানব জাতির পাপমুক্তির জন্য ক্রুশে রক্ত দিলেন (লেবীয় ১৬:৬-২২, মথি ১:১৩-১৭, যোহন ১:২৯, ইব্রিয় ৯:১২, ১০:১-১৮ পদ)।